নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস আজ। আজ ফারাক্কা লংমার্চের ৪৯ বছর পূর্ণ হলো। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার ও ফারাক্কা ব্যারাজের বিরূপ প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা, মহানন্দাসহ দেশের বড় বড় নদীগুলো তাদের নাব্যতা হারিয়ে হয়ে পড়েছে পানিশূন্য বালির চরাঞ্চল। আর ফারাক্কা ব্যারাজের বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় ও পানির নায্য হিস্যার দাবীতে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সারাদেশের লাখ লাখ মানুষ রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান থেকে মরণ বাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশ নেন ও লংমার্চ শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সেদিন থেকেই ১৬ মে ফারাক্কা দিবস নামে পরিচিতি লাভ করে। ঐদিন রাজশাহী থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ লং মার্চ শেষে কানসাট হাই স্কুল মাঠে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে মওলানা ভাসানী বলেন, ‘পানি আমাদের প্রাপ্য অধিকার, কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’ উল্লেখ্য বাংলাদেশকে পানিশুন্য করতে ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে মাত্র ১৮ কি.মি. দূরে ভারতের মনোহরপুরে দেয়া হয় ফারাক্কা বাঁধ। ১৯৬১ সালের ৩০ জানুয়ারি ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ১৯৭০ সালে শেষ হয় বাঁধটির নির্মাণকাজ। তখন পরীক্ষামূলকভাবে ভারত কিছু কিছু পানি ছাড়ে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে ফারাক্কার বাঁধ চালু হয়। ভারত ফারাক্কা বাধ নির্মান করে ১৯৭৬ থেকে একতরফাভাবে পানি নিজ দেশের অভ্যন্তরে ফিডার ক্যানেল দিয়ে প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে। ফলে ১৯৭৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানির নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিতই হচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে, শীতকালের শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদী থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত পানি পেত বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙ্গার পানি ইস্যু নিয়ে ৩০ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অতি দুর্বল একটি চুক্তি করেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই সে চুক্তি ভারত অকার্যকর করে দেয়। ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশ মাত্র ছয় হাজার ৪৫৭ কিউসেক পানি পায়, যা ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার পর সর্বনিম্ন প্রবাহ ছিল। অথচ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের পানি পাওয়ার কথা ৩৪ হাজার ৫০০ কিউসেক। ১৯৭৭ সালের পানি চুক্তিতে গ্যারান্টিক্লজ ছিল, কিন্তু এ চুক্তিতে তা না থাকায় ভারত বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা দিতে বাধ্য ছিল না। ফলে বাংলাদেশ পানি কম পেলেও তার প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া চুক্তিটিতে আন্তর্জাতিক সালিসিতে যাওয়ার কনো সুযোগ নেই। অথচ নেপালের সাথে মহাকালী নদী চুক্তিতে ভারত আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন মেনে নিয়েছে। কাজেই গঙ্গা নদীর পানি নিয়ে ভারতর সাথে যে পানি চুক্তি করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ এবং তা বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। এ চুক্তির সফলতা শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। এর কারণ গ্যারান্টিক্লজ বা অঙ্গীকার অনুচ্ছেদ না থাকা। বাস্তবে চুক্তির ফলাফল প্রায় শূন্য।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, আগে পদ্মার পাড়ে আমাদের জমিতে তিন ফসল হতো, এখন পানির অভাবে একটাও ঠিকমতো হয় না। নদীতে যদি পানি না থাকে তাহলে আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবো। শুকনো মৌসুমে টিউবওয়েল থেকে পানিও ওঠে না। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আশপাশের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এর একটা স্থায়ী সমাধান চাই।
ফারাক্কা ব্যারাজ ইস্যুতে ১৯৮৯ সালের ২৫ মে দ্বিতীয়বারের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে পায়ে হেঁটে কানসাট কলেজ মাঠে লাখো মানুষের বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. শাহজাহান মিঞা বলেন, ‘ফারাক্কা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হওয়া উচিত বৈষম্যমূলক সব চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন ও বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া। আমাদের উচিত পরিবেশের প্রাকৃতিক প্রবাহ বজায় রেখে নদী ব্যবস্থাপনা করা।’
বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষ সহকারী নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইমুম পারভেজ বলেন, ৭২ সালে গঠিত যৌথ নদী কমিশনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সময় এসেছে এই বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলে কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর।